সোমবার । ১৭ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী চাঙ্গা খুলনায় শীতের অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পঞ্জিকার হিসেবে শীত মৌসুম আসতে মাসখানেক বাকি। তারপরও শীতল পরশ নিয়ে গুটি গুটি পায়ে শীত এসেছে পীর খান জাহান আলী (রহঃ) এর খুলনায়। দুর্বা ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে শীতের আগামন বার্তা। শিবসা, পশুর, কপোতাক্ষ, রূপসা আর ভৈরব নদ কুয়াশার স্বপ্ন চাদর মুড়ি দিয়েছে। রাতের চাঁদের সাদা জ্যোৎস্না। দিনে মিঠে কড়া রোদ। নিত্য সঙ্গী হয়েছে শীত বস্ত্র। সুদুর নওগাঁ থেকে উলের নানা রঙের চাদর ও কম্বল এসেছে নগরীর শীতের বাজারে। এ পণ্য তৈরি হয়েছে বগুড়ায়। গেল বছর গণঅভ্যুত্থানের কারণে শীতের বাজার ছিল মন্দাভাব। এবার সে অবস্থার উল্টো। চাঙ্গা হয়েছে লেডিস চাদর ও কম্বলের বাজার। দাম গড়ে তিনশ’ টাকার নিচে। ক্রেতার ভিড় অনেক।

গেল বছর জুলাই-আগস্টে দেশ জুড়ে গণঅভুত্থানের সৃষ্টি হয়। আগস্ট পরবর্তী অর্থনীতি ছিল অস্থিতিশিলতা। সর্বত্র চলে মন্দাভাব। নিশ্চিত নিরাপত্তা পায়নি উত্তরের ব্যবসায়ীরা। নতুন সরকারের আমলের প্রথম দিকে বড় ধাক্কা খায় বিক্রেতারা। বড় পুঁজি বিনিয়োগ করেও লাভের মুখ দেখতে পায়নি খুদে ব্যবসায়ীরা।

উত্তরের চাদর ব্যবসায়ীরা সেই যেমন পাকিস্তান আমলের কাবুলিওয়ালাদের মত। তবে তাদের চরিত্র দু’ধরণের। কাবুলিওয়ালারা বাকি রাখত, পরের বছর এসে পাওনা আদায় করত। সাম্প্রতিক সময় নগরীতে উত্তরের চাদর ব্যবসায়ীদের বিকিকিনি নগদে। গেল বছর তারা লোকসান দেয়। এদের একজন মোঃ আব্দুর রহিম। ৩৫ বছর যাবৎ শীত মৌসুমে খুলনা নগরীতে আসে চাদর ও কম্বল বিক্রি করছে। বাড়ি নওগাঁ জেলার চকবিলকি গ্রামে। থাকেন পুরোনো রেলস্টশনে মাসিক ২২শ’ টাকার ভাড়া বাড়িতে। এবার পুঁজি বিনিয়োগ করেছে তিন লাখ টাকার কাছাকাছি। কেসিসি মার্কেটের সামনে ভ্যানের ওপরে তার ভ্রাম্যমাণ বাণিজ্য। সকাল থেকে রাত অবধি চলে বিকিকিনি। খদ্দরের চাদর প্রতিটি চার শ’ টাকা, লেডিস চাদর ও কম্বলের দর আড়াই শ’ টাকা। ছুটির দিন বাদে ১৫-২০টি পণ্য বিক্রি হয়। রাতে লাভের টাকা গোনে সাড়ে চার শ’ থেকে পাঁচ শ’।

মৌসুমের শুরু থেকেই হাসি মুখ, গেল বারের মুখ ছিল বেজার। তার মত আরও দু’জন ব্যবসায়ী একই জেলার ইলসাবাড়ি গ্রামের আব্দুস সামাদ সর্দার ও মাসুদ রানা। যৌথ পুঁজির ব্যাবসা। গেল শীত মৌসুমে চার মাসে লাভের অংশ হিসেবে ৩০ হাজার টাকা গুনে পকেটে করে।

তারা বলেন, এবারে রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। ঈদের আগেই বিকিকিনি শেষ করে নওগার ট্রেন ধরে স্বজনদের কাছে পৌঁছাবে। আশাবাদী লাভের অঙ্ক বাড়বে। তরুণ ব্যবসায়ী মোঃ রুহেল। স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ছাত্র। একই জেলার শৈলগাতি গ্রামে তার আদি নিবাস। এই প্রথমবারেরমত ব্যবসায়ী হিসেবে খুলনায় আসা। লাভ লোকসানের অভিজ্ঞতা নেই। ক্রেতাদের ভিড়ে তার মুখেও হাসি। সব বয়সী নারী-পুরুষ ভিড় করে সকাল-সন্ধ্যা। ডিসেম্বরের প্রথমে ভিড় আরও বাড়বে বলে আশাবাদী এ নতুন ব্যবসায়ী।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন